মঙ্গলবার,২৭ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গনেশ চক্রবর্তী, নিউজ বাংলা ডিজিটাল : কথায় আছে ছাই ফেলতে সেই ভাঙ্গা কুলো। দুর্গাপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের প্রভাব যাতে ভোট বাক্সে না পড়ে তাই দিদি র আদরের ভাই বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে ডেকে পশ্চিম বিধান সভার দায়িত্ব দিয়ে অভিমান ভাঙ্গালেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফাইল চিত্র
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে দুর্গাপুরের তৃনমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হলো দলের দীর্ঘ দিনের পোড় খাওয়া সৈনিক বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে। দুর্গাপুরের সম্পন্ন সার্কিট হাউসে তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পশ্চিম বর্ধমান জেলার লোকসভা নির্বাচনে জয়ের রুপরেখা তৈরি করে বিভিন্ন নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করেন। বিশ্বনাথ কে ডেকে সার্কিট হাউসে দায়িত্ব দেন স্বয়ং দিদি।বেশকিছুদিন ধরেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের বেশকিছু শীর্ষ স্থানীয় নেতারা কার্যত কোনঠাসা করে রেখেছিলেন দলের অসময়ের হাল ধরা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে।তাই পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের দলের অনেক অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতানেত্রীদের দেখা গেলেও বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে দেখা যায় নি। বরং বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের নিজের হাতের মুঠোয় থাকা ওয়ার্ড গুলিতেই দলীয় কর্মসূচিতে তাকে বেশি বিশ্বনাথকে দেখা গেছে। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা ১৭ ই ফেব্রুয়ারি অন্ডাল বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম যাবার সময় যখন নামেন।তখন বিমান বন্দরের বাইরে এসেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের আরেক পোড় খাওয়া প্রবীন নেতা ভি শিবদাসন দাশুকে বাড়তি দায়িত্ব দেবার বিষয়ে ফোন করে কথা বলবো বলেছিলেন। তখনই দলের প্রবীণ নেতাদের যে লোকসভা নির্বাচনে ডাক পড়তে চলছে অনেকেই ধারনা করেন।দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব রুখতে বার বার ভি শিবদাসন দাশুকে যেমন ডাক পড়েছে তেমনি গত কয়েক বছরে বার বার বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের ও ডাক পড়েছে।কারন দলের কর্মীদের একটা বড় অংশ এখনো বিশ্বনাথ পাড়িয়াল ও ভি শিবদাসন দাশুকে এখনো ভরসা করে চলেন একথা জানেন স্বয়ং দিদি নিজে। একসময় দল বদল করলেও তার জনপ্রিয়তা এবং তার অনুগামীদের ভোট ব্যাঙকের কথা মাথায় রেখে দলে যেমন ফিরিয়ে নেওয়া হয় তেমনি তৃণমূল কংগ্রেস দল প্রার্থী করে বিশ্বনাথকে।গত বিধান সভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বনাথ পাড়িয়াল দুর্গাপুর পশ্চিম বিধান সভা কেন্দ্র থেকে হেরে যান। বিশ্বনাথের অনুগামীরা এই জনপ্রিয় নেতার হার কে মেনে নিতে পারেননি।এটি তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরেই বিশ্বনাথের পরাজয় বলে দাবি করেছিলেন বিশ্বনাথ অনুগামীরা। তাকে হারানো হয়েছে বলেও অনেকে সুর চড়িয়ে ছিলেন।স্বাভাবিক ভাবেই সেই দ্বন্দ্ব এখনো রয়েছে দলের অন্দরে এবং প্রকাশ্যে। এরপর জল অনেক গড়ায়। তাছাড়া দলের জেলা স্তরের শীর্ষস্থানীয় অন্য সব নেতাদের দল ম্যানেজ করতে পারলেও বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে দলের বাড়তি দায়িত্ব না দিয়ে দল যদি ম্যানেজ করতে না পারে তাহলে বিশ্বনাথের অনুগামীরা লোকসভা নির্বাচনে চরম বদলা নিতে মরিয়া হয়ে আছেন সেই খবর আছে দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলার সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাসের কাছে।তিনিও চান তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্গাপুর পশ্চিম বিধান সভার ভোট ব্যাঙক অটুট থাকুক এবং গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ভেদাভেদ ভুলে সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করুন সকলে।বিশ্বনাথ পাড়িয়াল স্বমহিমায় লোকসভা নির্বাচনে মাঠে নেমে তার দলের কর্মীদের চাঙ্গা করলেই লোকসভা নির্বাচনে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধান সভার দলের ভোট ব্যাঙক অটুট থাকবে নচেৎ দলের একটা বড় অংশ ভোট চলে যেতে পারে বিজেপি র দিকে। বিশ্বনাথ পাড়িয়াল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ছাড়া দলের কারোর কথা সেই ভাবে মেনে চলার পাত্র নন।দল সেই কথা বিলক্ষন জানে। তাই সম্ভবত দিদিই সেই দায়িত্ব স্বয়ং নিলেন বিশ্বনাথকে বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে চাপিয়ে দিলেন।কার্যত পশ্চিম বর্ধমান জেলার লোকসভা নির্বাচনে দায়িত্ব প্রাপ্ত জেলার অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক অরুপ বিশ্বাস, জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর টিমে বাড়তি অক্সিজেন দেবে ভি শিবদাসন দাশু এবং বিশ্বনাথ পাড়িয়াল সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বছরের গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা নির্বাচনে দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব আঁচ করে ভোট বাক্স অটুট রাখতে দলের পুরানো নেতাদের সব জেলায় বাড়তি দায়িত্ব দিচ্ছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে দলের যাতে ক্ষতি না হয় এবং দলের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তাই অভিমানী বিশ্বনাথকে দুর্গাপুরেও দলকে জেতাতে বাড়তি দায়িত্ব দিলেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুর পশ্চিম বিধান সভার দায়িত্ব পেয়ে মুখে হাসি ফোটে বিশ্বনাথের।দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভিকট্রি চিহ্ন দেখান বিশ্বনাথ পাড়িয়াল।এই বিষয়ে বিশ্বনাথ পাড়িয়াল বলেন আমি দলের সবসময় অনুগত সৈনিক। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে যা দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো।তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ইউনাইটেড।আমরা লোকসভা নির্বাচনে দলের সমস্ত কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে দলকে জেতাতে এখন মরিয়া।