শঙ্খ সাঁতরার সাধের ‘নবদিগন্ত’ আজো নীরবে কাঁদে

বিশেষ প্রতিবেদন…..

গনেশ চক্রবর্তী, দুর্গাপুর : ২০১৮-১৯ সালে দুর্গাপুরের ২৮ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত নমো সগড় ভাঙ্গার কুষ্ঠ কলোনির নাম নব দিগন্ত হয়। দুর্গাপুরের তৎকালীন মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরা মশীহা হয়ে কুষ্ঠ কলোনির মানুষদের‌ পাশে দাঁড়ান। শঙ্খ সাঁতরার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাম আমলের তৈরি দুর্গাপুরের এই কুষ্ঠ কলোনিটি এক গুচ্ছ স্বপ্নকে পাথেয় করে নুতন রুপে নুতন ভাবে গড়ে ওঠে। শঙ্খ সাঁতরা হাত ধরে নুতন জীবন পায় নমো সগড় ভাঙ্গার কুষ্ঠ কলোনির দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো। যেখানে দুর্গাপুর নগর নিগম, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের মতো দুর্গাপুরের উন্নয়নকারী সংস্থা গুলি পর্যাপ্ত অর্থ তাদের ফান্ডে থাকা সত্ত্বেও সেই সময় নমো সগড় ভাঙ্গার কুষ্ঠ কলোনির মানুষদের‌ উন্নয়নের কাজ করার কোন আগ্রহ দেখায়নি অথচ একজন মহকুমা শাসক যার হাতে কোন অর্থ ভান্ডার নেই কেবলমাত্র আন্তরিক প্রচেষ্টাকে হাতিয়ার করে একদম খালি হাতে কুষ্ঠ কলোনির দীন দুখী মানুষদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে উদ্যোগী হন শঙ্খ সাঁতরা। নিজের নাম যশ বাড়াতে নয়।নিজের পদের অপব্যবহার করে নয়। কেবলমাত্র নমো সগড় ভাঙ্গার কুষ্ঠ কলোনির মানুষদের‌ জন্য কিছু করতে দুর্গাপুরে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে বিনীতভাবে আর্থিক সাহায্য চান। সেই আর্থিক সহায়তায় গড়ে ওঠে নবদিগন্ত।বিভিন্ন সরকারি বেসরকারির কর্মকর্তারা,সমাজ সেবীসংস্থা শঙ্খ আবেদন সাড়া দিয়ে শঙ্খ সাঁতরা এই কর্ম যজ্ঞে সামিল হন।নব দিগন্তে একে একে নুতন রুপে গড়ে কচিকাঁচাদের স্কুলটি , আবাসনস্থল, রাস্তা ঘাট, যাতায়াতের ব্যবস্থা, এমনকি নব দিগন্তের বাসিন্দাদের রুজি রোজগারের ব্যবস্থা ও করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের এই ডবলু বিসিএস (এক্সি)অফিসার। শঙ্খ সাঁতরার জন্য নব দিগন্তের নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া সেইসময় দুর্গাপুরের ভিক্ষুক থেকে সাধারণ মানুষ সকলের পাশে দাঁড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেও দেখা গেছে শঙ্খ সাঁতরাকে ।সেকথা সকলের জানা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুরে এসেছেন বিভিন্ন মহকুমা শাসক, দুর্গাপুর নগর নিগমের মেয়ররা এসেছেন, দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু কেউ শঙ্খ সাঁতরার সপ্নের নবদিগন্তকে বাঁচাতে পাশে দাঁড়াননি। ছিঁটে ফোঁটা ও উন্নয়ন করতে উদ্যোগী হননি সেই অভিযোগ নব দিগন্তের বাসিন্দাদের।দুর্গাপুরের এই নব দিগন্তের আজ বেহাল অবস্থা দেখে দুঃখ হয়। অথচ কোটি কোটি টাকার বাজেটে দুর্গাপুরে একের পর এক উৎসব অনুষ্ঠান হচ্ছে। উন্নয়নের‌ নামে দেদার টাকা জলের মতো খরচ করছেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা গুলির কর্মকর্তারা। সর্বোপরি দুর্গাপুরের মহকুমা কার্যালয়ের বর্তমান মহকুমা শাসক ডাঃ সৌরভ চট্টোপাধ্যায়কে সব জানানো সত্ত্বেও এই ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিতে তাকে আন্তরিক ভাবে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন নব দিগন্তের বাসিন্দারা। সদিচ্ছা থাকলে এই বিষয়ে বর্তমান দুর্গাপুর মহকুমা শাসক ডাঃ সৌরভ চট্টোপাধ্যায় প্রাক্তন মহকুমা শাসক শঙ্খ সাঁতরার নব দিগন্তের অসমাপ্ত কাজ গুলি সম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই পারতেন বলে দাবি নব দিগন্তের বাসিন্দাদের। নব দিগন্ত নিয়ে মহকুমা শাসকের উদাসীনতা দেখে হতবাক নব দিগন্তের বাসিন্দারা। নবদিগন্তের বাসিন্দাদের অভিযোগ নব দিগন্তের বেহাল দশা দেখেও দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখার্জি থেকে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ কোন সাড়া শব্দ করেনি আজ পর্যন্ত। নব দিগন্তের উন্নতি করতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য সরকারের এইসব সংস্থা। কেবলমাত্র ভোটের সময় ভোট ভিক্ষা চাইতে অবতীর্ণ হতেই দেখা গেছে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বলে দাবি নব দিগন্তের বাসিন্দাদের।সব থেকে বড় অভিযোগ ২৮ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় প্রাক্তন কাউন্সিলর অঙ্কিতা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। নব দিগন্তের বাসিন্দারা জানান অঙ্কিতা চৌধুরী ২৮ নং বিভিন্ন এলাকা নিয়ে যতটা সময় দেন এই নবদিগন্ত নিয়ে তিনি কোন চিন্তা ভাবনা করেন না। তিনি আসেন না এই নব দিগন্তে।নব দিগন্তের মানুষের দুঃসময়ে পাশে ও থাকেন না। কেবলমাত্র ৯৬০ মিটারের একটি রাস্তা কোনরকমে

নির্মান করে দিয়ে দায় সেরেছেন তিনি। যদিও সেই রাস্তাটি নির্মাণে দুর্নীতি নিয়ে সরব রয়েছেন বিরোধীরা আজ ও। নবদিগন্তের হালহকিকত জানতে গেলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেন দুর্গাপুর পূর্ব বিধান সভার বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের বিরুদ্ধে। একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন প্রদীপ মজুমদার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন বিশ্বস্ত মন্ত্রী অথচ তিনি ও নবদিগন্তের হালহকিকত জেনে কোন পদক্ষেপ নেননি। দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক ডাঃ সৌরভ চট্টোপাধ্যায়,নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখার্জি,এডিডিএর চেয়ারম্যান কবি দত্ত যেমন সব জেনে ও নবদিগন্তের বাসিন্দাদের প্রয়োজনে জীর্ণ বাড়ি গুলি সংস্কার করতে উদ্যোগী হননি।চারটি নলকূপ মধ্যে দুটি নলকূপ খারাপ সে গুলি সারানোর কোন পদক্ষেপ নেননি।নব দিগন্তের বাসিন্দাদের এখনো মাঠে প্রাত:কৃতি সারতে যেতে হয় তাদের প্রয়োজনে পায়খানা বাথরুম করে দেবার উদ্যোগ নেননি, বাড়িতে এখনো বিদ্যুৎ হুকিং করে নিতে হয় নবদিগন্তের বাসিন্দাদের, তাদের বাড়িতে আলো জালিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ দেবার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।খেলার মাঠ, স্বাস্থ্য পরিবহন ব্যবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা কিছু করার সেরকম কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে গুচ্ছ গুচ্ছ বাসিন্দাদের। এমনকি নব দিগন্ত ঢোকার মুখের ক্যানেল পাড়ের টার্নিং পয়েন্ট রাস্তাটি দুর্ঘটনা প্রবন হলেও সেই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেই কারোর। এই বিষয়ে মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে একটি চিঠিতে বিশদভাবে বলা হলেও মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার নাকি আজ পর্যন্ত নব দিগন্তের উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ নব দিগন্তের বাসিন্দাদের। নবদিগন্তের বাসিন্দারা জানান দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নে প্রশাসন যতটা উদ্যোগী ততটা উদাসীন নব দিগন্ত নিয়ে।তারা হতাশ। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে নবদিগন্তের বাসিন্দারা অগত্যা নব দিগন্তের উন্নয়নে শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে।

error: Content is protected !!